পার্সোনাল কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও পরিচিতি



পার্সোনাল কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ --


ডেক্সটপ কম্পিউটার

CPU : CPU আসলে একটি মাইক্রপ্রসেসর। প্রসেসর কত দ্রুত গননার কাজ করতে পারে সেটি সাধারন গিগাহার্জ (GHz) -এ প্রকাশ করা হয়। যেমন Pentium-4 3.2 GHz ইত্যাদি। প্রসেসর এর দ্রুত ডাটা বিনিময় ক্ষমতা বা Bus Speed ও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

            CPU এর মূল কাজ হল তথ্য বিশ্লেষণ ও যন্ত্রাংশ নিয়ন্ত্রন।এর জন্য প্রসেসর এর মধ্যে মূল তিনটি অংশ থাকে। 1. ALU 2.CU 3. RU

1. ALU (এরিথমেটিক লজিক ইউনিট) : Arithmetic Logic Unit বা ALU এর কাজ হল বিভিন্ন ধরনের Arithmetic (যোগ, বিয়োগ ইত্যাদি) অঙ্ক করা এবং লজিক্যাল অঙ্ক করা অর্থাৎ AND, OR, NOT ইত্যাদির সাহায্যে লজিক্যাল মান বের করা।

2. CU (কন্ট্রোল ইউনিট) : কম্পিউটার -এর সাথে যুক্ত এবং কম্পিউটার -এর মধ্যেকার সমস্ত যন্ত্রাংশকে নিয়ন্ত্রনের কাজটি করে এই Control Unit বা CU। ALU দ্বারা প্রয়োজনীয় হিসাব গুলি হয় এবং সেই হিসাব অনুযায়ী কন্ট্রোল ইউনিট যন্ত্রাংশ নিয়ন্ত্রন করে।

3. RU (রেজিস্টার ইউনিট) : এটি একধরনের মেমরি। RAM থেকে সমস্ত নির্দেশ ও ডাটা প্রথমে RU তে আসে। RU নির্দেশ গুলিকে প্রয়োজনীয় সংকেতে পরিবর্তন করে ALU তে পাঠায়। এছাড়া ALU তে অঙ্ক করার সময় যেসব ডাটা তৈরি হয়, সেগুলিও RU তে সাময়িক ভাবে রাখা হয়।

Memory (মেমরি) :
    1. প্রাইমারি মেমরি (Primary Memory) : প্রসেসর যখন কোন কাজ করে তখন সেই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ এবং ডাটা যে জায়গাতে রাখা থাকে তাকে বলা হয় প্রাইমারি মেমরি (Primary Memory)। কাজ শেষ হয়ে গেলে  এই মেমরি থেকে ডাটা এবং নির্দেশ মুছে যায় অর্থাৎ এই মেমরি অস্থায়ী। ডাটা মূল মেমরি থেকে আসে বলে এই মেমরির একটি প্রয়োজনীয় গুন হল অত্যন্ত্য দ্রুত ডাটা আদানপ্রদান করার ক্ষমতা। এছাড়া এই মেমরির পরিমান বেশি হলে কোন বড় প্রোগ্রাম চালাতে বা কয়েকটি কাজ একসাথে করতে সুবিধা হয়। সাধারনত প্রাইমারি মেমরি বলতে Random Access Memory বা RAM কে বোঝায়।
                        প্রধানত দুই ধরনের RAM রয়েছে, SRAM এবং DRAM.

            ক্যাশ মেমরি : CPU-র ডাটার চাহিদা যেহেতু RAM-এর ডাটা পাঠানোর ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি, তাই CPU-এর সঙ্গে এক বিশেষ ধরনের মেমরি যুক্ত থাকে, যার নাম ক্যাশ মেমরি (Cache Memory)।ক্যাশ মেমরির ডাটা পাঠানোর ক্ষমতা RAM-এর তুলনায় অনেক বেশি। ক্যাশ মেমোরি সাধারনত দুতি স্তরের হয় -- L1 এবং L2। RAM এবং CPU-এর মধ্যে ডাটা আদানপ্রদান এইভাবে কয়েকটি স্তরে হয়।RAM থেকে L2 ক্যাশ মেমরি, সেখান থেকে L1 ক্যাশ মেমরি, সেখান থেকে CPU.

    2. সেকেন্ডারি মেমরি (Secondary Memory) : সেকেন্ডারি মেমরি (Secondary Memory) কে সাধারনত স্টোরেজে ডিভাইস বলা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হল ডাটা স্টোর করা বা রাখা।
                 স্টোরেজ মাধ্যম হিসাবে সেকেন্ডারি মেমরিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়--
           i) ম্যাগনেটিক মিডিয়া : যেগুলিতে চৌম্বক ক্ষেত্রের সাহায্যে পড়া বা লেখা হয়। উদাহরন - হার্ড ডিস্ক, ফ্লপি ডিস্ক ইত্যাদি।
           ii) অপটিক্যাল মিডিয়া : যেগুলিতে বিশেষ ধরনের আলোক রশ্মির সাহায্যে পড়া বা লেখা হয়। উদাহরন - সিডি (CD), ডিভিডি(DVD) ইত্যাদি।

           হার্ড ডিস্ক : হার্ড ডিস্ক হল এক ধরনের ম্যাগনেটিক মিডিয়া। কম্পিউটারে তথ্য সঞ্চয়ের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য সেকেন্ডারি মেমরি হল হার্ড ডিস্ক। এই ডিস্ক এর মধ্যে কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম ও অন্যান্য প্রোগ্রাম ভরা থাকে বলে আমরা কম্পিউটার এ কাজ করতে পারি। কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি এই হার্ড ডিস্ক এ রেখে দেওয়া হয় এবং পরে তা ব্যবহার করতে পারি।
                    হার্ড ডিস্ক-এর ভেতরে অনেকগুলি আলুমিনিয়ামের বৃত্তাকার পাত থাকে, যার নাম প্ল্যাটার। এই পাতের দুদিকেই Thin Film Medium নামে একধরনের চুম্বক জাতীয় পদার্থের প্রলেপ লাগানো থাকে। এই চৌম্বক মাধ্যমে ডাটা স্টোর হয়, এবংRead/Write Head এর সাহায্যে সেই ডাটা পড়া বা লেখা হয়। প্রত্যেক প্ল্যাটার এর দুদিকেই Read/Write Head থাকে।
                 হার্ড ডিস্ক-এর ক্যাপাসিটি অর্থাৎ তাতে কতখানি ডাটা স্টোর করা যায় সেই পরিমান কে গিগাবাইট (GB-Gigabytes)-এ প্রকাশ করা হয়।

           ফ্লপি ডিস্ক : ফ্লপি ডিস্ক হল এক ধরনের ম্যাগনেটিক মিডিয়া। ফ্লপি ডিস্ক আসলে একটি গোল কাগজের মত পাতলা প্লাস্টিকের পাত, যার দুদিকে আইরন অক্সাইড -এর প্রলেপ দেওয়া থাকে। এই আইরন অক্সাইড -এর প্রলেপ একটি চৌম্বক মাধ্যমের কাজ করে এবং Read/Write Head এর সাহায্যে চৌম্বক ক্ষেত্র প্রয়োগ করে এতে ডাটা পড়া লেখা হয়। পাতলা পাতটি একটি শক্ত, চৌকো প্লাস্টিকের খাপের মধ্যে ভরা থাকে, এই খাপের ভেতর পাতটি সহজেই ঘুরতে পারে। পাতটি তে যাতে হেড স্পর্শ করতে পারে তার জন্য খাপের একটি অংশ কাটা থাকে এবং এই কাটা অংশটি একটি ধাতব পাত দিয়ে ঢাকা থাকে। ডাটা পড়া বা লেখার সময় ধাতব পাতটি সরে যায়।
                     কম্পিউটারে ফ্লপি ডিস্ক ব্যবহার করতে গেলে একটি ফ্লপি ডিস্ক ড্রাইভ লাগে। যার মধ্যে ফ্লপি ডিস্কটি ভরে কাজ করা হয়। ড্রাইভ -এর দুদিকে একটি করে Read/Write Unit থাকে ফ্লপির দুটি দিক পড়া ও লেখার জন্য। এক একটি ইউনিট -এ একটি ছোটো ও একটি বড়ো Head থাকে। ছোটো Head দিয়ে তথ্য পড়া ও লেখা এবং বড়ো Head টি দিয়ে মোছা হয়।

             সিডি (CD) : সিডি (CD) হল এক ধরনের অপটিক্যাল মিডিয়া। যা আজকালকার দিনে আমরা সর্বত্রই দেখতে পাই এবং ব্যবহারও করে থাকি। যেমন কম্পিউটার -এর প্রোগ্রাম (Program) ও সফটওয়্যার (Software) -এর জন্য ডাটা সিডি (Data CD), অডিও গানের জন্য অডিও সিডি (Audio CD), ভিডিও গানের জন্য অডিও সিডি (Video CD), সিনেমার জন্য ভিডিও সিডি (Video CD) ইত্যাদি। CD দেখতে 12cm একটি বৃত্তাকার পাতের মত। এতে প্রচুর পরিমানে ডাটা (700 Megabyte Data) রাখা সম্ভব হয় ও এর দামও খুবই কম।
                       সিডি থেকে ডাটা পরার জন্য সিডি রম ড্রাইভ (CD ROM Drive) -এর প্রয়োজন হয়। যার মাধ্যমে সিডি Read হয়। ড্রাইভ -এর মধ্যে মোটর এবং লেসার/লেন্স সিস্টেম থাকে। মোটরটি সিডি কে জোরে ঘোরায় এবং তখন সূক্ষ্ম লেসার রশ্মির সাহায্যে ডাটা পড়া হয়।

    ইনপুট ইউনিট (Input Unit) : আমরা কম্পিউটারকে কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের নির্দেশ দিই ইনপুট ইউনিট -এর মাধ্যমে। এখনকার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ইনপুট ইউনিট হল --

    1. কি বোর্ড (Key Board) : কি বোর্ড এর মাধ্যমে কম্পিউটারের সাথে আমাদের যোগাযোগ সবচেয়ে বেশি হয়। প্রকৃতপক্ষে, কি বোর্ড না থাকলে কম্পিউটার চালানোই যাবে না। যে কোন ডাটা যেমন অক্ষর A, B, C এবং সংখ্যা 1, 2, 3 ইত্যাদি কি বোর্ডএর মাধ্যমেই দেওয়া হয়। কি বোর্ডএ অনেক সুইচ থাকে, র এই সুইচ ভেতরের মাইক্রপ্রসেসর-র সাথে যুক্ত থাকে। যখন কোন কি টেপা হয়, তখন একটি নির্দিষ্ট সংকেত মাইক্রোপ্রসেসর -এ যায়। সেই সংকেত থেকে মাইক্রোপ্রসেসর বুঝতে পারে কোন টেপা হয়েছে, এবং সেই অনুযায়ী কম্পিউটার কে জানায়। কি বোর্ড একটি তারের মাধ্যমে কম্পিউটার -এর সাথে যুক্ত থাকে। যে কি টেপা হয়েছে , তার ডাটা তারের মধ্য দিয়ে কম্পিউটারে যায়। একটি কি বোর্ড -এ বিভিন্ন ধরনের কি থাকে, যেমন - A, B, C - টাইপিং কি। 1, 2, 3 - নিউমেরিক কি। F1, F2, F3 - নেভিগেসন কি, ইত্যাদি।


    2. মাউস (Mouse) : মাউস হল একপ্রকার হার্ডওয়্যার ও কম্পিউটার -এর একটি ইনপুট ডিভাইস। যার সাহায্যে কম্পিউটার কে কিছু কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। যে সকল কম্পিউটার -এ GUI সম্পন্ন অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) থাকে সেই সমস্ত কম্পিউটার -এ বিভিন্ন কাজ করার জন্য ইহার সাহায্যে নির্দেশ দেওয়া হয়। কোন আইকন এর উপর মাউস দিয়ে ক্লিক করলে, সেই আইকন টি যে কাজের জন্য, কম্পিউটার সেই কাজ করে। কোন আইকন -এ যাওয়া হচ্ছে সেটি বোঝানোর জন্য মনিটরে একটি তির চিহ্ন আঁকা থাকে, সেটিকে বলা হয় কারসার (Cursor)। মাউস কে কোন শক্ত সমতলে রেখে, চলাচল করিয়ে কারসার টিকে Display Screen -এর উপর আকাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছানো যায়। মাউস সাধারনত দুই ধরনের হয়--- বল মাউস এবং অপটিক্যাল মাউস।

                
                এছাড়া আরও আনেক ইনপুট ডিভাইস রয়েছে, যেমন-- স্ক্যানার (Scanner), মাইক্রোফোন (Microfone) ইত্যাদি।

    আউটপুট ইউনিট (Output Unit) : কম্পিউটার-এ যে সমস্ত কাজ হয়, সেগুলো আমরা দেখতে, পড়তে বা শুনতে পাই আউটপুট ইউনিট এর মাধ্যমে। কম্পিউটারে কাজ করা প্রায় অর্থহীন হয়ে পরবে, যদি আমরা জানতেই না পারি কম্পিউটার আদৌ কাজ করতে পারল কি না। তার জন্য আমরা আউটপুট ইউনিট ব্যবহার করি। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আউটপুট ইউনিট হল ----

    Post a Comment

    Previous Post Next Post